আবর্তনে বিবর্তন
রচনায়
মোহাম্মদ আতাউর রহমান
রাস্না হাউজ উত্তরখান মাজার, উত্তরা, ঢাকা।
E-mail: ar_forest@yahoo.com
marahman@feppcar.org
ডিসেম্বর, ২০০৪ইং, ঢাকা।
¯^ত্ত¡াধিকারী ঃ মোহাম্মদ আতাউর রহমান
ISBN: ৯৮৪-৩২-১৮৪২-৬
সংকলন:- অক্টোবর ২০১৭ ইং
যাদের আদশ আমাকে অনুপ্রানিত করেছে তাদের ক’জনঃ
সর্বজনাবা আকতারুন নেসা
শিক্ষিকা, দি বাডস্ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, শ্রীমঙ্গল।
ডঃ আসগারি বানু
অধ্যাপিকা, কায়েদ-ই-আজম ইউনিভার্সিটি, ইসলামাবাদ, পাকিস্তান।
ডঃ সেলিমা বেগম
বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদ বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।
আলপনা সেন
শিক্ষিকা, দি বাডস্ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, শ্রীমঙ্গল।
শিল্পী লাহিড়ী
এম, এ (বাংলা) ঢাকা।
জনাব শাহ্ কামাল লান্চু হক
উর্ধ্বতন গবেষনা কর্মকর্তা, বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনষ্টিটিউট, শ্রীমঙ্গল।
ও
ডঃ নাজলী রহমান
সাধকজ্যোতি
হযরত গাজী মাহ্মুদ ফকির (রাঃ আঃ) এর স্মরণে
সূচীপত্র
কবিতার নাম পৃষ্ঠা
১। আবর্তনে বিবর্তন ৭-১৪
২। কলঙ্কিনী ১৫-১৮
৩। ফকির বাড়ি ১৯-২৩
৪। কেরল বন্দনা ২৪-৩৪
৫। কেরল থেকে ফিরে ৩৫-৩৯
৬। বঞ্চিত কবিতা ৪০-৪৬
৭। কবি নজরুল স্মরণে ৪৭-৫১
৮। অবুঝ সবুজ বিপ্লব ৫২-৫৩
৯।প্রবাদ বচন ৫৪-৬১
১০। প্রবাদ বচন-২ ৬২-৭১
১১। তালগাছ ৭২-৭৪
১২। সাথী জীবন ৭৫-৭৮
১৩। মানবতা ৭৯-৮১
১৪। চাই বিদেশী ৮২-৮৪
১৫। উন্নয়নের জোয়ারে ৮৫-৯১
১৬। বাংলা মা ৯২-৯৮
১৭। কবুতরের জামাই খানা ৯৯-১০২
আবর্তনে বিবর্তন
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
চলন্ত এ বিশ্বমাঝে চল্ছে ধরা, মহাকাল জুড়ে
চক্রে আবর্তে ছন্দে নৃত্যে রূপলাবন্যে
গতিময় এ অনন্তের মেলায়।
কে আছে স্থির একটি মুহুর্তের তরে?
আসা আর যাওয়া, স্থির আর অস্থির
শুধু তূল্যগতির আপেক্ষিক খেলা।
জীবন-যৌবন, জড় আর অজড়
মায়া-মমতা বন্ধন প্রকৃতির লীলা
নিত্য গড়েছে, ভেঙ্গেছে আবার
সেইতো পুরানো খেলা।
আলো আর আঁধার
সুখ আর দুখ
একই বৃত্তে ঘুরছে সদা
তার মাঝে বসে আমি আজ
মেতেছি মোহের মেলায়
বাঁচা আর মরা, মোহ-সম্ভোগ
অধিকার নিয়ে শুধু প্রতিযোগিতা।
শিকার আর শিকারীর খেলা
নিত্য চল্ছে ধরায়,
কেহ খায়, কেহবা খাওয়ায়
কেহবা কেড়ে নেয় অন্যের খাবার।
কাড়াকাড়ি বাড়াবাড়ি যুজে বাজে জিতলে যারা
মানুষ নামে জীব সকলের সেরা।
কৌশল, সুযোগে, ¯^ার্থে, নৈপূন্যে
সুবিধাবাদী মানুষ,
ভেঙ্গেছে গড়েছে আপন ¯^ার্থে
শ্যামল সুন্দর বিচিত্র ধরা।
আবর্তন বিবর্তন চক্রে
স্থিতি আর গতির এইতো গোলক ধাঁধা।
ক্ষুদে ভাইরাস, এ্যামিবা তথা অতিকায় হাতি আর তিমি
ইষ্ট-প্লাঙ্কটন কিংবা অশ্বত-সিকোয়া
জন্ম-মৃত্যু বর্ধন, উপকার-অপকার একে অপরে
আকারে, প্রকারে, জাতিতে-প্রজাতিতে মিল আর ভেদ
তবুও চলছে মিলন, বন্ধন, যৌগ-বিভাজন
মৃত্তিকা বায়ু জলে,
এইতো জীবন চির গতিময়।
লয় ক্ষয় মিশ্রন সতীর্থ সংঘাতে চলমান
জড় জীবন মাধ্যমে অভিযোজন।
পরিবর্তন, পরিবর্ধন, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া
অধিকার, আবাস, ভোগ-শক্তিবোধে
টিকে আছে তারা বিত্তবাসনা মোহ-অহংকারে,
যাত্রা পথে দলিছে এক অপরে
বুদ্ধি বিবেকে ভরপুর মানব।
হেসেছে খেলেছে সভ্যতার গরবে
ছুটছে অনন্তের সন্ধানে
রকেটে উপগ্রহে মহাকাশের তথ্য লভিতে;
তবু কেন ভুখা মানব কেঁদে মরে
সুন্দর এ বিশ্বজুড়ে কিসের অভাবে?
কেউ কি বলে দেবে মোরে
ধরা কি হেরেছে ধারণের ক্ষমতা তার সন্তানের?
কাড়াকাড়ি কি তবে দুষ্ট¯^ভাব চিরকালের?
কোন্ পথে মোরা এগু”িছ সভ্যতা নিয়ে?
না ফের আদিমের টানে?
গাধা, ঘোড়া, পাল্কী, টম্টম্
ভেলা, ডিঙ্গিঁ, নৌকো, জাহাজ
মোটর, বাস, রেল, উড়োজাহাজ, রকেট
টেলিফোন, বেতার, টেলিভিশন, ভূক্যাবল, কম্পিউটার
গ্রাম, গঞ্জ, নগর পেরিয়ে
গ্রহ হতে গ্রহান্তরে ছুটছে মানুষ অসীমের মেলায়,
এগিয়ে চলছে সভ্যতা, প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানে।
মাটি, পাথর, ধাতু, তাপবিদ্যুৎ,
সৌর শক্তি আর পরমানু নিয়ে
দ্রুত, মহা দ্রুত গতিতে চল্ছে।
আজ যা নব প্রযুক্তি
আগামী দিনে তা পুরানো কালচার।
পাখির মতো উড়ছে মানুষ বিদ্যুৎ গতিতে
টেষ্টটিউব আর ক্লোনে নবমানব
লিভার, কিডনী, হার্ট সংস্থাপন,
টিস্যু কালচার, ডিএনএ আর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
অনেক করেছে জয় মর্তের মানুষ
জ্বেলেছে আলো সারা বিশ্বময়।
তবুও কোথা যেন অন্ধকার তমাসার পীড়ন
কাঁদে সহ¯্র ভুখা ফাকা জীর্ন মানুষ মলিন বদনে
দুমুঠ ভাত, একটু ওষুধ আর আশ্রয়ের তরে।
করুন আর্তনাদে ভেসেছে সাহারার বাতাস,
নীল, গঙ্গা, ইরাবতী, মেকং, দজলা, ফোরাতের জল।
সভ্যতার কুফল গ্রেনেট, এটম, মর্টার, কামানে
প্রকম্পিত ভলকান, প্যালেস্টাইন,
সদা রক্তে রঞ্জিত
কঙ্গো, জায়ার, মেসোপটোমিয়া-ব্যাবলিন।
নব প্রযুক্তি আর উন্নয়নে হারিয়েছি অনেক জীব বৈচিত্র্যেও ধন,
শাসিত শোষিত হয়ে সেজেছে গিনিপিগ শত শত জাতি,
অনেক এগিয়েছে মানুষ;
হয়ত তবু নিজেকে জানার অনেক রয়েছে বাকি।
এইকি সাধনা শিক্ষা বিজ্ঞান আর নব্য সভ্যতা?
শিক্ষা কি শুধু শোষনের হাতিয়ার?
এর চেয়ে নয় কি ভাল বন্য প্রাণীর ব্যবহার?
জাতিতে জাতিতে লাগায়ে সংঘাত
করেছে পরীক্ষা অস্ত্রেরধার,
কত রসায়ন কত এন্টিবায়োটিক, এক্সরে, স্কেনার,
ইকোকার্ডিওগ্রাফি আর ও কত কিছু
চিন্তায় অকেজো হার্ট করছে বদল বাঁচবার তরে,
ভাবেনি কেহ পার্শ্ব ক্রিয়ার কথা
ভুলেছে আজ লতা-পাতা, ফলমূল, বাকলের গুন
হারা”েছ নিজ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
উন্নয়নের নামে সৃষ্টির কুফল ছড়া”েছ ঘরে ঘরে
কোনটি ভাল আর কোনটি মন্দ কে তারে বোঝাবে?
আমার কাছে যা ছি ছি অন্যের কাছে তা কৃষ্টি।
পাহাড়ী নদীর ওজানে বেঁধেছে বাঁধ
উন্নয়নের নামে জলাধার সৃষ্টি,
তার ফলাফল ভুগিছে কি শুধু
ভাটির দেশের ডোবা-বিল শুকায়ে
হাহাকার শুধু পানির অভাবে,
কিংবা বাঁধের উ”িছষ্ট পানি বর্ষার দিনে হঠাৎ করে ছেড়ে
বন্যায় প্লাবিত ভাটির ফসলের ক্ষেত,
মরছে জীবকুল ডুবছে ঘর
সবই হয়েছে সাবাড়
অসহায় গ্রামবাসী।
কম্পিউটার, টিভি, স্যাটেলাইট, ই-নেটে
ছড়ানো নোংড়া কত ছবি,
শুধুঘৃণ্য ব্যবসার তরে।
কলের গাড়ী আর কারখানার ধোওয়ায় অন্ধকার
আর নদীতে পতিত বর্জিত বিষ।
হায়রে পরিবেশ, হায়রে বিবর্তন
সকলই চলবে-
কোনটি ভাল আর কোনটি মন্দ কে মোরে বোঝাবে?
আমরা কি শুধু করব নসিহত নতুন টেকনোলজি দিয়ে?
আমার কি নেই কোন দায়িত্ব?
আমি কি দিয়েছি মোর গা-খানি ছেড়ে?
হতাশ আর উদাসে।
বিশৃক্সখলা আর শৃক্সখলা আজ মিশেছে সর্বস্তরে।
না, কখন না, মানবনা হার-
আমা হতে হল শুরু, সত্য ও সুন্দরকে বের করে আনার
আঁধার আর অসুন্দরের কালিমা থেকে।
বিবর্তন চলবে; ভালমন্দ বুঝার দায়িত্ব আমার,
আমার স্ত্রী, কন্যা, পুত্রের,
¯^জন, পড়শী আর জগৎমাতার সৃষ্টির কল্যানে।
১০ই মার্চ, ২০০৪, শ্রীমঙ্গল।
কলঙ্কিনী
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
আমি ফিরে যেতে চাই ঐ ঘরে
যেথা দখিনা বাতাস হু হু করে,
ঢেকে রাখে মোরে মায়া মমতা দিয়ে
সেই সে বাগবেড় গ্রামে।
দিনের আলো আর রাতের আঁধার
প্রকৃতি যেথা রোজ দোল খায়
পাখ-পাখালীর কলরবে,
মায়াময় বিথী কিবা
নয়োজেশ আহ্মদের ‘বন বনানী’ তে
যেথা রয়েছে আমাজনের মহাবন।
আমি ফিরে যেতে চাই
সেই সে বাগবেড় গ্রামে।
পাঁচটি পাড়া মিলে বাগ-বাগিচায় ঘেরা
ছোট দুটি বিল আর সাতটি বাঈদ।
মাঝে তার অতল কলঙ্গিনী অথৈ জলের কুড়
কচুরী পানায় ঢাকা।
মনে পড়ে সেই কচুরীপানার ফাঁকে
কালজলে রোদ পোহাত বিশাল গজার,
বাজ, চিল, কুরুয়া র্মতো সেথা
র্ধতে এসে সেই গজার।
শুনেছি আরো কত রূপকথা,
গজারের টানে
অকাল মরণ কত শিকারীর
কোমরে বাঁধা ঠেঢা কোচসহ দামাদলের নীচে।
ঐ যে কলঙ্কিনী, কালপানি,
থাক্ত ষেথা ভয়াল আজর,
সিন্দুক ভরা গুপ্তধন নিয়ে আস্ত মৎস-রাণী,
অন্ধকারে নাচ্ত যেথা জলপরী আর পেত্নীবুড়ী।
আজো মনে পড়ে সেই কালবৈশাখীর ঝড়ে
কৈ মাগুরের নাচানাচি নালা আর পথ জুড়ে,
কুড়াবো কি আম, না ঐ উজানে লাফানো কৈ আর মাগুর?
ষাটের দশকে মহা ধুমধামে
শুকিয়ে সেরেছে সেই কলঙ্কিণী,
সবুজ বিপ্লব আর ইরি ধান চাষে
কলের পাম্প দিয়ে শুকায়ে করেছে উজাড়
সেই সোনার মৎস্য খনি।
চার পাশ কেটে করেছে ভরাট
বাড়াতে চাষের জমি।
শুকিয়ে মরেছে মোর দুখী কলঙ্কিনী-
কোথা সেই তলাহীন কুড়?
কোথা সেই কচুরী পানার শুভ্র-বেগুনী ফুলের হাসি?
কোথা সেই শাপলা-শালুক, কলমী
আর পদ্ম রাশি রাশি?
কোথা সেই অতল কলঙ্কিনী
যেথা হতে ছড়িয়ে যেতো লক্ষ মাছের বীচি?
কোথা গেলে পার ফিরে সেই কলঙ্কিনী
যেথা হতে মঘানদী মিলে ছিল নরসুন্দায়,
উতাল পাতাল আর গরজনে
আবেগে আপ্লুত ব্রহ্মপুত্রে একাকার,
সেই মঘা, নরসুন্দা আর ব্রহ্মপুত্র
চির চঞ্চল ভৈরবে প্রণয়ে জড়াল
চির যৌবনা রূপকুমারী মেঘনার জলে।
৭ই ফেব্রæয়ারী, ২০০৪, শ্রীমঙ্গল।
ফকির বাড়ি
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
আমি ফিরে যেতে চাই সেই ঘরে
মাটিতে বিছানো খেজুর পাতার মাদুর,
শীতল পাটিতে মোড়ানো সেই খাট,
কারুখচিত পালঙ্ক আর কাঠের পুরানো সিন্দুক
সযতনে যেথায় রয়েছে মোতির হার
বেতের পেটেরায়।
সেই ফকির বাড়ি
সাত পুরুষ- তারও পুরানো আদি বাড়ি
আজও কি আছে সেথা আটচালা বৈঠকঘর খানি
আটাশটি গজারীর খুটি, মজবুত আর নিখুঁত
কারুর সুন্দর ঘরখানি?
তেরশো ছাব্বিশের বানে
সারা গ্রামবাসী যেথায় নিয়েছিল আশ্রয়
তিন পুকুরে ঘেরা সেই ঘর।
কত না ফলের বাহার
বেল, তাল, কলা, নারকেল, জাম্বুরা
জাম, জামরুল, পেয়ারা, কাঁঠাল
আম সবার সেরা
ফজলী, মালদাহ্, কালিয়া, নলিয়া
হিমসাগর কবরখানা আর আঙ্গিনা ঘিরে।
আছে কি ওরা আজও সেথায়
নিজেরা ভোগে ¯^জন আর পড়শীকে বিলায়?
আজও মনে পড়ে
পাটের শিকেতে ঝুলানো মাটির পাতিলে
পাটিসাপ্টা, তাল আর কলার পিঠা
কলসীতে ভরা গরমে শান্তি তৃষাতে পরম পুন্যজল
ডাব, তোক্মা, লেবু আর বেলের শরবত
মিটাতে তৃষা, জুড়াতো দেহমন।
সেই যে পুরানো বাড়ি
তিন একর ভুঁই জুড়ি
নতুন শরিক আর জমি ভাগাভাগি।
বৈঠক, পুকুর, কবরখানা এখনো এজমালি
মাছ, গাছ, ফলমূল, অধিকার নিয়ে বাড়াবাড়ি
ঝগড়া ফ্যাসাদ নিত্য আছে লাগি।
সমাধান শুধু একটাই
কেটে ফেল, ভেঙ্গে ফেল
নয়তো করে দাও বিক্রি।
কুঠারের কোপে কত ফলগাছ হলো লাকড়ী
নতুন করে কে লাগাবে?
যা আছে তাই খাও
বাড়ানোতে নেই কোন দৃষ্টি।
বেড়েছে মুখ, ভেঙ্গেছে ঘর,
আবাদী জমির উপর গড়ছে নতুন বাড়ি
নতুন সংসার, কমছে শুধু ফসলী জমি।
এরই মাঝে আসল আবার উন্নয়নের জোয়ার
শহর গঞ্জে উন্নয়ন, ভুললে শুধু বাড়ি।
নতুন নতুন টেকনোলজী ছড়িয়ে দিলে দেশে
দাতাদেশ, পরামর্শক, পন্ডিত আর এনজিওরা মিলে।
ঢাকঢোল আর প্রজ্ঞাপন রেডিও টিভিতে
কৃষি-বনের উৎপীড়ন, ‘গাছ লাগাও আর দেশ বাঁচাও’
নতুন নতুন গাছ নাম শুনিনি জনমে যার;
ইপিল ইপিল, একাশিয়া, ইউকেলিপ্টাস্
মেহগনি, রেইনট্রি আর মেনজিয়াম।
বাড়বে দ্রুত, কাঠের আয়ে পুরবে ব্যাংক
হবে ত্বরিত বনায়ন।
ঐ উন্নয়নের বানী শুনে কেড়ে নিল সরল মন
ভুলে গেল আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা
ডালিম, আতা, পেয়ারা, চাল্তা
জাম, জামরুল, কামরাঙ্গা, তাল, সুপারী, করমচা
পেয়ারা, নারকেল, আমলকী
হরতকী আর জাম্বুরা;
ডেউয়া, ঢেফল, গাবের গাছ
সারা বাড়িতে একটিও নেই।
কাজলগুড়ি, চাউ সবই সাবাড়
তেতুল গাছটি করলো ছাই
পরিবেশকে করলে ধ্বংস।
শুধু কি তাই? ভিটির জমিতে করলো রোপন
মরুদেশীয় মেনজিয়াম আর দাক্ষিনাত্যের শিশু।
কে বুঝাবে তাদের হাজার বছরের আভিযোজনের মর্ম?
১০ই মার্চ, ২০০৪, শ্রীমঙ্গল।
কেরল বন্দনা
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
বাবা, আমি কেরল যাব
-সেটা কোথায়?
পশ্চিম ঘাটে।
-পশ্চিম ঘাট? নিশ্চয় নদীর পশ্চিম তীরে?
না বাবা, আরব সাগরের পূর্বতটে
দাক্ষিনাত্যের গিরিতটে।
-কেন যাবে? কি মতলবে?
শুনেছি সেটা আজব ভূমি
মাটিতে তার সোনা ফলে,
গাছে গাছে ফসল ফলে
বাড়ি কিংবা আঙিনাতে,
পাহাড় কিংবা উপত্যকায়
ছায়া কিংবা রোদের ছটায়।
সাগর কিংবা উপকুলে
যা পায় তাতে সোনা ফলায়
ঝিনুক হতে মুক্তা কুড়ায়।
বাড়ি বাড়ি গাড়ী আছে
কাঁচা বাড়ি নেই কোথাও
গ্রাম শহরে নেইকো তফাৎ
আই-এসডি আর কম্পিউটার
ই-নেট নাকি ঘরে ঘরে।
দাও না বাবা একবার সেথায়
যেতে মোরে?
-তাতে তোর কি?
জানতে আমি উৎসুক খুবই,
দেখ্তে দেখ্তে শিখ্তে চাই,
সেই সে কেরল পাঠশালায়;
আমেরিকা, জাপান, ফরাসী, ব্রিটিশ র্হাল যেথায়
বিশ্ব যারে প্রণাম জানায়।
হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান যেথায়
এগিয়ে চলে ঐক্যতানে,
ঝড় ঝঞ্জা আর রৌদ্র খরায়
জলো”ছাস আর মহাপ্লাবনে।
আমার বড় ই”েছ করে
দেখতে তারে, শিখতে কিছু
জাতির তরে দিতে কিছু।
-কে বলছে তোরে শিখ্তে কিছু?
তোর জ্ঞানে আমার দরকার নাই,
জানা আমার অনেক আছে
আমার সঙ্গী বহু আছে
তোর জ্ঞানে আমার কি লাভ?
পন্ডিত আমার বহু আছে
আমার দরকার পদলেহী,
আমার দরকার চটুকার,
সপ্তাহ পরে টাকার তোড়া,
রাত নীশিথে হুরের মেলায়
মাল্য দিবে আমার গলায়
শরবত আর শুড়শুড়িতে-
তুই কি পারবি সেটা দিতে?
না বাবা, সেটাতো আমি ঘৃণা করি।
-তবে তোর দ্বারা মোর হবে কি?
তোর জ্ঞানের দরকার নেই।
আর যদি করিস্ বাড়াবাড়ি
কান ধরে দেব বের করি,
কাঁদবে তুই রাস্তায় পড়ি।
সততা তোর অহংকার
রাস্তায় করবে গড়াগড়ি।
তিন সাক্ষিতেই চোর বন্বি
মুখে লাগাবে চুনকালি।
তোর রাজ বিদ্যালয়ের শিক্ষা যত
জনম ভরে রইবে অবহেলিত।
তোর শিক্ষার কোন দাম নেই
তোর জ্ঞানে মোর কোন কাজ নেই
তোর চেয়ে গাধা ভাল।
আমার দরকার টাকা-কড়ি,
ঢাকায় আমার পাঁচটি বাড়ি
বিলাতে আছে দু’টি
এখন দরকার নিউইয়র্কে;
দরকার আমার সেই লোকের
বানাতে পারে যে পাউন্ড ডলার,
লাখে লাখে রোজান্তে।
তোর তো সেই বুদ্ধি নেই,
তোর কেরলে আমার লাভ নেই,
আমি থাকতে তোর কেরল যাওয়া হবেনা।
বাবা, দোহাই তোমার
এমন কথা বলো না,
কেরল বড় শিক্ষার জায়গা
একবার যেতে দাওনা?
হেথায় রাবার চাষ বাড়ি বাড়ি
উৎপাদনে বিশ্বে সেরা।
নারকেল আর সুপারী গাছে
গোলমরিচ আর পান চাষে,
কলাবাগে সুপারী-নারকেল,
ধইঞ্চা গাছেও পানের বরজ।
কোকো, কফি, মৌচাষ বাড়ির আঙিনা জুড়ে,
আধোছায়ায় লঙ্কা লেবু
ছায়ায় কচু, কাসাভা, ওল আর শাপলা পদ্ম ঝিলের জলে,
রোদে মালটা, কাজুবাদাম যেথায় যা ফলে।
ফুল ফল পাতার বাহার
সুন্দরের নেই জুড়ি তার।
যেথা যাবে শিখবে সেথা নতুন নতুন টেকনোলজী,
সাগর কুলে নৌকো জাহাজ
লক্ষ লক্ষ মৎস্যজীবি,
আর মুক্তা কুড়ায় ঝিনুক চাষী।
দাওনা বাবা সেথা যেতে
শান্তি দিতে জ্ঞান পিয়াসী আত্মাটাকে।
-না, দরকার নেই তোর শিক্ষার
কারন, আমার তাতে লাভ নেই।
মনে রাখবি আমিই সেরা, জগৎ জুড়ে আমার ভুঁই
কেবা খেল কেবা পরলো, আমার তাতে কি?
শিয়ালের মতো ধূর্ত আমি, বন্ধুতে লাগাই সন্দেহ
সিংহের মতো খেলায় মাতি, টের পায়না মশামাছি
শিকার করি গরু-মহিষ, দলছুট সব জিরাফ হাতি,
আমিই সিংহ বনের রাজা।
নড়বি যদি মরবি তুই,
জন্ম থেকেই শত্রæ তুই,
কেরল তুই ভুলে যা, শিক্ষা তোর লাগবেনা
তুই বড্ড একগুয়ে, সততা নিয়ে থাক শুয়ে।
বাবা, তোমায় আমি মহৎ পেতে চাই
বাবা, আমি একটিবারে কেরল যেতে চাই।
-না, কেরল তুই যাবি না, কেরলে আমার হবে কি?
জানবি তুই আমিই সেরা, আর সব অধম হত”ছাড়া
বুদ্ধি নাইতো সতের সেরা, ভাল মানুষ ভাবে ওরা।
বুদ্ধি থাকলে মিথ্যাটারে সত্য বানাতে পারতো তারা
বস্ খুশী অফিস খুশী, খুশী কর্মচারী
যোগ বিয়োগের বাড়তি আয়ে খুশী ঘরের স্ত্রী
টাকা নইলে এ মহতে¦র দামটা বল কি?
এ কেমন বাবা তুমি পরধনে বড্ড লোভী?
গ্রামেই তোমার জন্ম জানি, যাওনা কেন গ্রামে তুমি?
বিদ্যাশিক্ষা ধ্বংস সেথায় পয়সাকড়ির অভাবে।
‘সবার জন্য শিক্ষা’ সারই কি তার ¯েøাগানে?
কোচিং, গাইড, টিউশন ফি পায় কি তারা সমানে?
নাই কি মেধা গায়ের ছেলের
কেন হারে কম্পিটিশনে?
পাশের হার সর্ব নি¤েœ, হ”েছ কেন ভবঘুরে?
চাকুরীতো তাদের সোনার হরিণ
বয়স ফুরায় কেন অকালে?
এক সিলেবাস, ডবল ষ্ট্যান্ডার্ড ঘুছবে কি তা জনমে?
¯^াস্থ্যসুযোগ নামে মাত্র
সাহ্য পাওয়ার কম্পিটিশন,
করুনাতে করলে শাসন গুন্ডা পান্ডা সন্ত্রাসী,
তোমার মতো গুটি কয়েক ধনপতি।
তাইতো আমি জানতে চাই,
কেরল মডেলে গড়তে চাই;
গ্রাম শহরে তফাৎ নেই,
ধনী গরীব ভাই ভাই
করুনা নয়, কাজ চাই,
এমন শিক্ষা শিখতে চাই, ¯^াবলম্বী হতে চাই
মায়া মমতা বাঁধতে চাই
পরের দুখে সাথী হই, সমান তালে এগুতে চাই,
তাইতো আমি যাবই যাব কেরলায়
বিশ্ব জননীর পাঠশালায়।
আমি জানতে শুধু, সোনার বাংলায়
নেইকো কেন সোনা?
তাল শহরে নেইকো কেন তালগাছ?
প্লাবন ভূমির রাস্তা-বাঁধে মরলো কেন শিশুগাছ?
রেলের ধারে কেন মেহগনি আর ধান জমির পাশে কেন রেইনট্রি?
আমি জানতে শুধু, উসমানী উদ্দ্যানে কেন একাশিয়া?
লাউয়াছড়া আর ভাওয়ালে কেন ম্যানজিয়াম?
অর্কিড, নিটাম, ডেইয়া, চাম, বনাক, আওয়াল
ছাতিম, কদম, হরতকি আর বহেরা
শত শত জাতের গাছ জানা আর অজানা
উপড়ে ফেলে কেন লাগালে ম্যানজিয়াম আর মালাকানা?
কি করেছিল দেশী সুজন?
কেন আনলি বিদেশী গাছ
না জেনে পরিবেশ তার?
মূল্য কোথায় এমন ধনের না জানি যার ব্যবহার?
আমি জানতে শুধু পাহাড়বন উজাড় কেন?
বন আবাদে তোরজোড় কেন গ্রামে আর গঞ্জে?
কি করেছে আম-কাঁঠালে, তাল, নারকেল, জাম, সুপারী
পায়না কেন চাষীরা তার মূল্য?
আনারস কেন করছে আবাদ শ্রীহট্টের ঐ পাহাড় চুড়ে?
হাওড়-নদী মরছে কেন
পাহাড় ক্ষয়ে ভরাট হয়ে?
আমি জানতে চাই-
পদ্মপাতা, পদ্মফুল, পদ্মমাখনার নেই কেন যথা মূল্য।
কবে দেখব পদ্মচাষী ফলায় ফসল
বিল ঝিল আর জলাশয়ে?
আমি জানতে চাই-
তামিল, অন্ধ্র, কর্নাটক
গুজরাট আর মহারাষ্ট্রে
থোকায় থোকায় আঙুর ঝুললে
ফলবে না কেন তা বঙ্গে?
তাইতো আমি আসব ফিরে
কেরল নামের দেশটে ঘুরে।
২৭শে নভেম্বর, ২০০৩, কলকাতা।
‘কেরল থেকে ফিরে’
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
বাবা, আমি কেরল থেকে এসেছি ফিরে
সব দেখেছি ঘুরে ফিরে,
যা শুনেছিনু সবই সত্য
মাটিতে তারা ফলায় সোনা
সাগর থেকে মানিক রতন,
যা পায় তারে করে যতন
প্রনাম জানায় জ্ঞানীকে।
নেই শুধু সেথা তুমার মতো
অসৎ আর ধান্ধাবাজ।
তোমার মতো সিংহ নেই
অগোচরে যে শিকার ধরে,
কে বলে তুমায় বনরাজ?
হতে পারে পশুরাজ, তুমি শুধু ফন্দিবাজ
পেছন থেকে চুপটি সারে
অসহায়, দুর্বল প্রাণীটারে
খাটাও শুধু হাফ বেতনে,
জন-কল্যাণ নামে পকেট পুর,
কে বলে তুমায় জননেতা?
তুমি শুধু ক্ষমতা আর ধনের পাগল।
তোমার নেশা সরবতে, লিপ্সা তোমার নারীতে
তুমি মানব জাতির কলঙ্ক
ছিঃ! তোমায় বাবা ডাকতে আমি ঘৃণা করি।
জান কি কেরল কেমন দেশ?
ক্রেতা বিক্রেতায় কোন নেইকো রেশ,
উৎপাদকের উৎপাদন ভোক্তারা করে মূল্যায়ন
মধ্যসত্যভোগী খুব কমই আছে
ঠক পাইকার আর মজুদদার মোটেও নেই।
নারী পুরুষ সমান তালে এগিয়ে নি”েছ জাতিটাকে
বুদ্ধি খাটায় দিনরাতে সকল সম্পদ ব্যবহারে।
হাত বাড়াতে দেখিনি কাউকে,
ঝগড়া-ঝাটি নেই মোটেও।
উচুঁ ভূমির আইলে আইলে
রোপে আনারস শত-সহ¯্র।
তাই বলে নয় পাহাড়চুড়ে,
পাহাড় পর্বতের ক্ষয়রোধে।
কাঁচকলা দিয়ে চিপ্স বানায়
আর গাছের পাতার খাবার পাত্র
টেইকওয়ে আর ক্যাফেতে।
টেলিফোন বুথে বসে বুডু
সারা কেরল ঘুরিয়ে দিল,
অফিস কিবা গবেষনাগারে
তার টেলিফোনেই কাজ সাড়ে।
সত্যি কেরল পন্যভূমি
বিদ্যাবুদ্ধি জ্ঞানচর্চায়, প্রকৃতি আর মানবতায়,
হরেক জাতির মিলনে,
তাই তো আমি জনম ভরে প্রণাম জানাই কেরলে।
মনে পড়ে সদাই আমার ছোট্ট একটি ঘটনা,
দেমাগ গরিমা নেইযে তাদের
নেইকো ফাঁকি কাজকর্মে।
গিয়েছিনু প্লান্টেশন করপোরেশন অফিসে
ম্যানেজিং ডাইরেকটর সেদিন ছিলেন না যেথায়,
দেখা করেছিনু প্রধান প্রশাসনিক কর্মকতায়;
নামটি তার ভাগ্যল²ী করলে আমায় অভ্যর্থনা,
বলেছিনুঃ আমি বড্ড ভাগ্যবান;
সকল তথ্য তথায় পেলাম।
বললে আমায় ভাগ্যলক্ষীঃ যা তুমি চাও
দেখতে পার, যা ই”েছ শিখতে পার
সকল আঞ্জাম করলে আমার।
বল্লেম আমি চুনুপুটি,
আমার কোন হবেনা ত্রæটি
প্রণাম দিদি ভাগ্যলক্ষী।
বললে দিদিঃ পরদেশী ভাই মনে রেখ
এগুলো তো মোর কাজরে ভাই;
জ্ঞানচর্চায় মোদের নেই অহংকার
ভাল যা পাই শিখি মোরা
বিদ্যাশিক্ষায় উৎসুক হই,
নামটি কিন্তু মোর ভাগ্যলক্সমী
নামেও মোদের পাবেনা ফাঁকি।
২৭শে নভেম্বর, ২০০৩, কলকাতা।
বঞ্চিত কবিতা
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
সব নিয়ে গেছে উজাড় করে
শূন্য এ মোর সাহিত্য ভান্ডার
সেরা তাতে কবি গুরু ঠাকুর
আর বিদ্রোহী নজরুল।
আরও কিছু যা অবশেষ ছিল
ভাগ করে নিলে শরৎ, সুকান্ত
দ্বিজেন, কামিনী, জসীম, জীবনানন্দ
রুদ্র আর শামছুর রহমান প্রমুখে।
অবশেষ কিছু রাখলে কি তাতে?
লিখতে যা চাই, চম্কে দাঁড়াই
এ লেখাতো লেখে গেছে
মোর কবি বহুদিন আগে।
সমাজ, সভ্যতা, ইতিহাস-দর্শন
আর ভাল কিবা মন্দ
সকলই তো হয়ে গেছে জানা।
লোকমান, এ্যারিষ্টাটল, সক্রেটিস
শেক্সপিয়ার, হোমার, কিট্স
সাদী, রুমী আলবেরুনী, ফেরদৌসী
লিওটলষ্টয়, ডেল্কার্নেগী, কার্লমার্কস,
ইকবাল, ওমর খৈয়াম, গান্ধী, কালিদাস
শহীদুল্লাহ, চৈতন্য আর অতীশদীপংকর
আরও শত শত মহাপ্রাণ।
মানব কল্যাণে বিলিয়েছে প্রাণ।
কোরান, পুরান, বেদ, বাইবেল
রেখে সবার উর্দ্ধে,
সকলেরই একই কণ্ঠ-
মানব আর মানবতার গান।
সবইতো হয়ে গেছে বলা
আমারই বা কি আছে বলার?
গল্পে, প্রবন্ধে, কাব্য-সাহিত্যে
আর নাট্য-নাটিকার চরিত্র রূপায়নে
প্রত্যক্ষ্য, পরোক্ষ, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অনুপ্রাসে
নিংড়ায়ে নিংড়ায়ে সমাজ সংসার
সুখ-দুখ, সংস্কার আর কুসংস্কার
সবই তো তুলেছে ফুটিয়ে।
এরপর আর আছে কি কিছু?
সবই তো হয়ে গেছে বলা,
তবু বসেছি মিছে বল্ব বলে কিছু।
বলব শুধু নাটকের কথা-
সাজানো নাটক- সুখ দুখে গাঁথা
রাজা রানী, সিংহাসন,
মানিক্য খচিত রাজমুকুট
আর অসাঢ় পোশাকের দৃশ্য।
ছিলে বাদী, হয়েছে রাণী মহিমাগুণে,
চালা”েছ রাজ্য সকল প্রজার সুখে
একটু দুখে রইবে না কেহ,
রাজ্যভরে শুধু মায়া মমতা, সুখ আর শান্তি।
লক্ষ্যভ্রষ্ঠ তীরে মরেছে ধোপাপাত্র;
কাজীর বিচারে দোষী রাজকুমার
সুশাসনে দন্ডে রাজকুমারের ফাঁসী,
রাজকুমার মেনে নিলে বিচার।
এগিয়ে এলেন রানী তীর ধনু নিয়ে
ডাকলেন পুত্রশোকে কাতর ধোপাস্ত্রীকে
বললেন দেও মোরে পাঁজর ঝাঁঝ্্্্রা করে
এই তীর ধনু দিয়ে মিটাও পুত্রশোকের জ্বালা।
রাজ্য জুড়ে ধ্বনিত হলো
জয় রাজরানীর জয়
সুবিচার সুশাসন আর শান্তির জয়।।
ধোপাস্ত্রী তীরধনু নিয়ে দাঁড়ালে এসে
নতশিরে রাজরানীর পাশে
ক্ষমা আর ত্যাগের মহিমা নিয়ে
রাজ্য জুড়ে আবার ধ্বনিত হলো
জয় ক্ষমা আর ত্যাগের,
জয় মানবতার, জয় সকলের।।
এইতো নাটক নিত্যদিনের সুখ-দুখ,
দোষ-ত্রæটি আর অপরাধ-অশান্তি নিয়ে
মহানন্দে সবাইতো করছে ভোগ;
নাটকেই সেজেছে রাজা নাটকেই প্রজা,
নাটকেই ভৃত্য নাটকেই বাদী,
নাটকেই খল আর নাটকেই কাজী
কেউবা কাঙাল, কেউবা ভূখা, দুখী-চর্মসার
কেউবা সাজে সমাজপতি কেউবা গডফাদার।।
এইতো নাটক সমাজের বিবেক, হাসি-কান্না
অধিকার আর ন্যায়-অন্যায়ের প্রতি”ছবি।
কিন্তু নাটক শেষে-
সেই আমি আর সেইতো তুমি।
শিল্পীরা শুধু ক্ষনিকের তরে রাজা আর রাজরানী,
ভৃত্য, বিবেক কিংবা পথচারী
কেউবা কাজী, কেউবা পাজি, কেউবা নাচের নর্তকী।।
আর দেখছি যারা-
বিবেকে দেয় নাড়া ক্ষনিকের তরে
নাটকের সাথে তালমিলিয়ে
কখনো হাসে কখনো কাঁদে,
কেউবা আবার নাখোশ হয়ে চটে।
সেতো ক্ষনিকের হাসি-কান্না থাট্টা-বিদ্রুপ,
খনিকের উপভোগ,
নাটক শেষে যেমন ছিলাম ফের আগের মতো
উপমা-উপদেশ সেতো পরিহাস,
সমাজ আর মানবতা কাঁদে দূরে বসে।
তাইতো বলেছিনু লিখ্ব আমি কি?
সবই তো হয়ে গেছে লেখা
আমার শুধু ক’টি কথা ঃ
বলার চেয়ে শোনা ভাল
মুখ বলবে মনের কথা
জানবো যেটুক মানবো সেটুক
মন্দের চেয়ে ভাল যেটা।
সকল ধর্মে সব ঋষি
যুগে যুগে এসেছে যত
সবার মুখে একই কথা
কল্যান করো মানবতার।।
৭ই মে, ২০০৪, উত্তরখান, ঢাকা।
কবি নজরুল স্মরণে
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
তুমি বিদ্রোহী!
যুগে যুগে তোমার বিদ্রোহ
ভেঙ্গে করেছ চুরমার
অত্যাচারের যত জিঞ্জির যত শৃক্সখল।
তুমি উৎশৃক্সখল!
মানবতা বিনে রুখতে পারেনি কোন শৃক্সখল,
সেই ইংরেজ বেনিয়া, দেশী চাটুকার, জমিদার
মানোনি কারো শোষনের আইন।
তুমি নির্ভিক সৈনিক!
যুগে যুগে তোমার শানিত তরবারী
ঝলসিত হয়েছে
অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে।
তুমি কালবৈশাখীর ঝঞ্ঝা!
তুমি টর্নেডো, তোমার হুংকারে
মহাসাগরে ফেনিল তরঙ্গ
উন্মত্ত প্রলয় গর্জনে।
তুমি বর্ধমানের দুখুমিয়া!
ডানপিঠে চঞ্চল,
তুমি ত্রিশালের ক্ষ্যাপা বিদ্যার্থী, মহা উৎশৃক্সখল
তুমি কোলকাতার অগ্নিবীণা।
সীতাকুন্ডের প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ড বিদ্রোহী সৈনিক।
তুমি মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, কন্ফুসিয়ান
সকল ধর্মের প্রতিক।
তুমি ভন্ড গোঁড়া পুরোহিত, মোল্লা, ব্রাহ্মন
আর যাজকের মহাশত্রæ।
তুমি মানুষ, তুমি ওমর ফারুক
তুমি মানবতার প্রতি”ছবি,
যুগে যুগে অন্যায়, অবিচার আর
উৎপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী কণ্ঠ,
তুমি বিদ্রোহী নজরুল।
তুমি সুন্দর, তুমি ভালবাসার মুর্তপ্রতিক
ভালবেসেছে মানুষ
দিয়েছ অর্ঘ্য সুন্দরী রমনীর বেদীতে
যুগে যুগে কেঁদেছে তোমার প্রাণ
নিষ্পাপ বুলবুলের অকাল মৃত্যুতে।
তুমি দুর্জয়, তুমি নির্ভয়, তুমি হিমালয়
তুমি রূঢ় বাস্তবতায় দরিদ্রকে করেছ জয়।
রেস্তোরায় রুটি পুড়ানো, কৃষকের হালচাষ
রাখালের বাঁশীর সুরে পাগল আর
যাত্রাদলের নায়ক।
তুমি কবি, তোমার সৃষ্টিমুখী সাহিত্য
তুমি মঞ্চে উত্তাল উন্মত্ত গানের কণ্ঠ,
তুমি অস্ত্রে সজ্জ্বিত গর্জিত কামান,
মুক্তি পাগল বিহঙ্গ, তুমি সৃষ্টিসুখে উন্মাদ
তুমি ‘জাগরণ’ এর সম্পাদক।
তুমি পুজেছ নারীকে-
মাতা, ভগ্নি তথা সৃজনের অর্ধেকে
তাই বলে তুমি লাঞ্চনা আর ঘৃনা করতে ছাড়নি
পুজারিনী নামের ঐ অতিলোভী দেবীকে।
তাইতো তুমি মহান, বিশ্বের বিস্ময়
সৃষ্টির অপরূপ সুন্দর।
তাইতো আমি ভালবাসি তোমাকে
গর্বিত আমি জানায়ে তোমায় নমস্কার।
তুমি যুগে যুগে যেন আর্বির্ভত হও প্রতিবাদী কণ্ঠে
আকাশ বাতাস বির্দিন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে,
স্রষ্ঠার সৃষ্টিকে যে করেছে কলঙ্কিত
তুমি তার চির শত্রæ।
যত কাপুরুষ, কুশিক্ষিত, মুখোশধারী
ঘুষখোর, চোর-বাটপার আর কুলাংগারের বিরুদ্ধে।
মসজিদের পাশে শুয়ে শুয়ে
আর কতদিন সইবে অন্যায় আর রক্তঝরার রাজনীতি?
কল্যাণের নামে বহুরূপী আমলা
আর গণতন্ত্রের নামে শোষণের রাজনীতি?
সম্প্রীতির নামে সহিংসতা,
ধর্মের নামে উৎশৃক্সখলতা আর সন্ত্রাসীর রাজনীতি?
জেগে ওঠ কবি, আমার প্রিয় কবি-
আবার উ”চ কণ্ঠে কর আহŸান;
সেই আহ্বান, সেই শিক্ষা
সৎ, সুন্দর আর কল্যাণ মানবতার।
সেই পবিত্র শিক্ষাঙ্গন থেকে
যেথা হতে যুগে যুগে
গর্জে উঠেছে শত-সহ¯্র কণ্ঠ
শোষণ, বঞ্চনা আর উৎপীড়নের বিরুদ্ধে।
সুপ্ত পুন্য-আত্মা জেগে উঠবে আবার
লক্ষ-কোটি বিদ্যার্থীর, তোমারই আহ্বানে।
২৫শে মে, ২০০৪, উত্তরখান, ঢাকা।
অবুঝ সবুজ বিপ্লব
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
সেই সবুজ বিপ্লব-
‘অধিক খাবার ফলাও’
¯েøাগানে মুখর চারদিকে
উ”চ ফলন ইরি আর হাইব্রীড ধান
ফল্বে বছর জুড়ে,
আউশ, আমন আর
বোরোর ভেদাভেদ ভুলে।
তিনটি ফসল জেনো নিশ্চিত
দু’টো ধান আর একটি গম
তবে সেচ নির্ভর।
বাঁধ নদী, সেচ পানি
শুকায়ে জলাধার
দাও সার ইউরিয়া-পটাশ
ডি-এপি, টি-এস-পি আর ডলোমাইট
ফল্বে ফসল দ্বিগুন-বহুগুন।
নতুন জাত, নতুন বালাই
আর নেই যার প্রতিরোধ শক্তি।
ভয় নেই, দাও বালাইনাশক মহাশক্তি
ডিডিটি, এনড্রিন আর ডাইমাক্রোন
রাউন্ড-আপ, গ্রামোক্সোন নামে আগাছানাশক
ছিটিয়ে জমিতে, পানিতে, ফসলে
করলে কতো অনাছিষ্টি।
মরলো, জরলো লক্ষ-কোটি
দেখা অদেখা সৃষ্টি-ক্ষুদেজীব,
রইল দেহ, মরল মাটির প্রাণ,
সার আর কীটনাশক বিনে
ফলেনা আর ধান।
২০শে মার্চ, ২০০৪, উত্তরখান, ঢাকা।
প্রবাদ বচন
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
মনে পড়ে আমার
সেই গ্রামখানি,
প্রবাদ আর বচনে ভরা
যেন জ্ঞান আর সাহিত্যের খনি।
হাজার বছরের প্রকৃতির লীলা
রন-বান-সম্ভোগ আর আচরণ,
আয়াসে শ্রমে দুখে ক্লান্তিতে
শীত গ্রীষ্ম শারৎ হেমন্তে,
পল্লবিত বসন্ত কিবা অঝোড় বর্ষায়,
হাটে ঘাটে মাঠে কিবা আঙিনায়
ভরা নদীর কলতান জোছনা ভাদরে।
শুরুতে, শুচিতে, কৃষিতে, যৌগে
বন্ধনে, আহারে, বিহারে
কিংবা ভাগ্য গননায়;
নক্ষত্র, তিল, স্পন্দন, ¯^পন
সমর্পন দিবস ক্ষনে।
প্রবাদ বচন- ভাবনা চিন্তা সংস্করণ
হতাশা বিষাদে করে উওরণ।
আধেকে বিচারে না যেচে তারে,
কুলক্ষনে আর কুসংস্কারে ভেবে
করলে মলিন শত বর্ষের
আহরিত জ্ঞান।
আজও কি কেউ নাতিপুতি
নিয়ে মনের উ”ছসিত আবেগে
কে”ছা, স্তুতি আর স্মৃতি রোমন্থনে
শুনা”েছ প্রবাদ আর খনার বচন
মোর সেই গ্রামে?
সেই শত বর্ষের প্রবাদ বচন, খনার সংকলন
আর সেই কে”ছা গাথা ময়মনসিংহ গীতিকায়
দীনেশ চন্দ্র, জসীমউদ্দিন
আরো মহাপ্রাণ খানিক করেছেন গ্রন্থন।
ফিরে পেতে চাই সেই জ্ঞান
মৃগনাভ তুল্য,
ফিরে পেতে চাই সেই প্রবাদ
বুঝিতে চাই তার মূল্য;
গোবর, গোয়াল আর গরুর দুধ
দধি, ঘি, পনির আর ঘোলের মর্ম।
সেইকাঁচা গোবরÑ
গাছের খতে সহজ নিরাময়
মহাপবিত্র গোবরজলে পুন্য¯œান
বেড়া চাটাই মাদুর টুকরী আর ঘর লেপন
আর বালাইনাশিতে।
লাউয়ের গাছে মাছের জল,
বেগুন, মরিচ আর মানেতে ছাই
তার পরে কোন ওষুধ নাই,
ওলেতে কুটি, বাঁশেতে ধানের ছিটা
গুয়াতে গোবব, বাঁশেতে মাটি
অফলা নারকেলের শিকড় কাটি
পাতায় পাতায় ছুবেনা মরা ঝাটি সয়না,
দাতার নারকেল বখিলের বাঁশ
কমেনা বাড়ে বারোমাস
কিংবা
গো নারকেল নেড়ে পো
আম টুটুবে কাঁঠাল ভোঁ।
শোনরে মালি বলি তোরে
কলম রোও শওনের ধারে,
ষোল চাষে মুলা, তার আধা তূলা
তার আধা ধান, বিনা চাষে পান।
আঁধার পরে চাঁদের কলা।
কতক কালো কতক ধলা
উত্তরে উঁচা দক্ষিণে কাত-
চাল ধান দুই সস্তা
মিষ্টি হবে লোকের কথা।
আষাঢ়ের পঞ্চদিনে রোপন করে যে ধান
বাড়ে তার কৃষিবল, কৃষি কাজে হয় সফল।
এক অগ্রাণে ধান,
তিন শ্রাবনে পান
ডেকে খনা গান-
রোদে ধান, ছায়ায় পান,
পান পুতলে শ্রাবনে
খেয়ে না ফুরায় রাবনে।
ভাদ্দরে চারি, আশ্বিনের চারি-
কলাই বুনি যত পারি,
সরিষা বুনে কলাই মুগ
বুনে বেড়াও চাপরে বুক।
ফাল্গুনে না রুইলে ওল
হয় শেষে গন্ডগোল,
বুনলে পটল ফল্গুনে
ফল বাড়ে দ্বিগুনে।
উঠান ভরা লাউ শশা
ঘরে তার ল²ীর দশা,
তাশ পাশা দুরে থোও
বৈশাখ জৈষ্ঠ হলুদ রোও,
আষাঢ় শ্রাবনে নিড়াবে মাটি
ভাদ্দরে নিড়ায়ে করগে খাটি।
খনা বলে শুন শুন-
শরতের শেষে মুলা বুন,
মূলার ভূই তুলা, কুশরের ভুঁই ধুলা।
এই যে প্রবাদ শর্ত বর্ষ পুরোন
খানিক ভেবে সত্য আসিবে বেরয়ে
হরেক সমস্যার সহজ সমাধান।
চৈত্র কার্তিক শাওনে
কলাবাগ করোনা রোপন,
আড়ালে এ মহাসত্য
একটু ভেবে দেখি
চৈতের খড়া শুষ্ক হাওয়া-
শুকনো মাটি, চৌচির ধরা-
কার্তিকের কর্কশ রশ্মি পরে শুকনো খড়া
আর শাওনে অতিসিক্ত
জলমগ্নে পচে শিকড় গোড়া।
ভাদরের রোদে রেশমী-পশম সুতী কাপড়;
মরিবে ছাড়পোকা, ছাতা আর উঁকুন,
করবে ছাটাই কাঁঠাল শাখা
ফাড়িবে অফলা কাঁঠালের কান্ড।
সুপারী বাগে মান্দার রোও
আধা ছায়ায়, নহে দক্ষিন পাশে,
যদি লাগে দক্ষিণা, কান্ড পুড়ে হবে ছাই
ক্ষয়রোধে বাঁশ আর তালের জুড়ি কোথায়?
এক পুরুষের লাগায় তাল তিন পুরুষে খায়।
পূবে হাঁস, পশ্চিমে বাঁশ, দক্ষিণে ছেড়ে
বাড়ী করগে পোতা জুড়ে,
তারি খানিক রূপান্তরে,
উত্তরের ভিটা ঘরের রাজা
পশ্চিমের ভিটা তার প্রজা
দক্ষিণের ভিটা ঘর টেশসই নয়
পূবের ভিটায় বসত নয়।
সাজলে-গুজলে নারী আর
লেপলে পুঁছলে বাড়ী।
সৎসঙ্গে সর্গবাস অসৎসঙ্গে সর্বনাশ,
সময়ে যে না দেয় চাষ
তার দুঃখ বারো মাস।
বিদ্যা অমূল্য ধন,
বিদ্যা নাই যার, মর্ম বুঝে তার।
তেল ঘি সমান যেথা,
জ্ঞানের কদর নাই সেথা
ব্রাহ্মণ হয় রাখাল,
চন্ডাল খলে রাজ্য চালায়।
১৮ই মে, ২০০৪, উত্তরখান, ঢাকা।
প্রবাদ বচন-২
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
বার মাসের বার ফল
না খেলে যায় রসাতল।
যদি খায় তালের আশঁ
হাইগ্যা মরে বার মাস।
শুয়ে যে জাগে আর
খাওয়ার পরে হাগে,
তবে জানো সে
কঠিন পীড়ায় ভোগে।
তিন ভাল যার আঠার দোষ
বুঝে শুনে কবুতর পোষ।
যদি বর্ষে আগুনে
রাজা যায় মাগনে
যদি বর্ষে পৌষে
গোলার ধান তূষে
যদি বর্ষে মাঘের শেষ
ধন্য রাজার পূণ্য দেশ।
যদি বর্ষে ফাগুনে
চীনা কাউন দ্বিগুনে
যদি বর্ষে চৈতে
চীনা এলো কইতে।
চৈতে চালিতা
বৈশাখে নালিতা
জৈষ্ঠে আম
আষাঢ়ে জাম
শাওনে সর্ষে ইলিশ
ভাদ্দরে তালের পিঠা
আশ্বিনে শসা মিঠা।
কার্তিকে ওল
অগ্রানে খলসের ঝোল।
পৌষে শীতের পিঠা
মাঘে কলার পিঠা।
ফাগুনে বেল
চৈতে তেল।
যদি বর্ষে পৌষে
গোলার ধান তুষে।
ফাগুনের আগুন
চৈতে মটি
বাশঁ বলে শীঘ্র উঠি উঠি।
কাচাঁ নোয়ালে বাঁশ
পাকলে করে ঠাস ঠাস।
যে করে পরের আশা
অভাবে মরে বারমাস।
নিম নিসিন্দা যেথা
মরন আছে কি সেথা?
শীতে কাক সুন্দর
মানুষ হয় বান্দর
ভাদ্র মাসে কুত্তা পাগল।
জংগলে মংগল
সাগরে সুখ
হাভাতে অলসের
জনম ভরা দুখ।
খাইতে খাইতে পেট বাড়ে
কথায় কথায় মুখ বাড়ে।
উনো পেটে দুনু বল
অতি ভোজে রসাতল।
যার আছে নাতি পুতি
সে করে আখের খেতি।
আতাফলের পাতার রসে
গো মহিষের উকুন নাশে
বছরে বছর কলাই মুগে
জমির বাড়ে মান
চৌঠা বছর আখের চাষে
পায় নতুন প্রান।
বিয়ে দিবে ভাত দেখে
কন্যা নিবে জাত দেখে
জাতের মেয়ে কালো ভালো
নদির পানি ঘোলাও ভাল
অজাত নিলে সংসার গেল।
শান্তি যদি পেতে চাও
এক অপরে ছাড় দাও
বাড়াবাড়ি করলে পর
নিশ্চিত তুমার ভাঙ্গবে ঘর।
নাপিতের হাসি
ধূপার বাসি
সুতারের কাল
এ তিনের একই চাল।
পাটের পরে আলুর চাষ
রোগ বালাই এ সর্বনাশ।
এক চিমটে আমলকি চ‚র্ন
আর আধা চামচ মধু
রোজ প্রভাতে সেবন অষ্ঠপ্রৌড়ে
সামলায় ষোড়সী বধু।
আউশ ক্ষেতে ডাটা বুনে
চারপাশে তিল
এ তিনে বালাই নাশ দ্বিগুনে ফসল।
গাজা তামাক বাদ দিয়ে
মিষ্টি আলুর কর চাষ
মরিচ বাদাম ধনে জিরা
মৌরী তরমুজ মুলা ক্ষিরা
নদীর পারে বালুচরে
এর চেয়ে ভাল ফসল নাইরে।
কম খরচে বেশী লাভ
হাইব্রিড আর বিদেশী চাষ
ধংশ করলো নদীর মাছ
রাই-সরিষা কলাই তিশি
সময় মত করো চাষ
সেচ সারের দরকার নাই
ঘরের ছাইয়ে বালাই নাশ
কম খরচে বেশী লাভ।
মাটি যদি বানাতে চাও
পাহাড় টিলায় বাঁশ লাগাও
ক্ষয় রোধে নদীর বাঁকে
বালুচরে ঘূণিঝড়ে
কার্তিক অগ্রাহনে বাশঁ কাটলে দূর হবে
ঘুনের বালাই,
তার বেশীতে কাটলে পরে
লাভ কিছু নাই তাতে।
বিদেশি ফসল আর হাইব্রিড বীজ
সার বিষে জমি গেল
পানির হল সর্বনাশ,
বাওড়, বিল, নদী গেল
সাগরেও আজ হাহুতাশ
বিষের জ¦ালায় মৌমাছি ফড়িং
ব্যাঙ শামুকেরা গেল কোথায়?
শীম শসায় বাঁশের আগা
কঞ্চি সহ জাঙ্গলা দাও
চাল কুমড়া চালেই ভাল
বড়ই গাছে কাকরোল
ঝিঙ্গে পুরল বেড়ায়-গাছে
উ”েচ পটল, ক্ষিরা মাটিতেই ছড়ায়
আধো ছায়ায় হলুদ রসুন
দুধ কচু আরও ছায়ায়।
একে সুখী
দুয়ে ভোগী
তিন এ রুগী।
মাঘে তেল
ফাগুনে বেল।
যত মত, তত পথ
যদি ভাল থাকতে চাও
বছরে একটা হলেও সাজনা খাও
পান সুপারী খয়ের চুন
যৌবন রয় সারা জনম,
সারা জীবন
সুঠাম দেহে কাটবে জীবন
সৌর্য বীর্ষে কাল
চিন্তায় সচল।
যদি বর্ষে ফাগুনে
রাজা বেরোয় মাগনে
যদি বর্ষে পৌষে
কাড়ি হয়ে তৌষে।
গরুর ঘটা ঔদর পীড়া
মাছে রোদে শাস
ওদের করতে নাই বিশ্বাস
ওরা শুকিয়ে মরে
আবার বাঁচে
এক থেকে হয় আশি
তোরা চল আয় কুচুরি নাশি।
২রা মার্চ ২০১৫, উওরা, ঢাকা
তালগাছ
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
চার বেহারার পালকি চড়ে
যায় বধুয়া গায়ের পথে
বেয়ারার গায়ে র্ঝছে ঘাম
তবু র্জোছে গাইছে গান,
বউ বড় ভারী
যেন তাল গাছের গুড়ি।
ঐ যে তালের গাছ
ভোলা পথিকের পথের দিশা।
পুকুর ঘাটে, নদীর ধারে
বাঁধের পাড়ে ক্ষয় রোধে।
এক পুরুষে লাগায় তাল
তিন পুরুষে খায়,
বার বছরে ফলে তাল
যদি না লাগে গরুর লাল।
পাতার ছাউনি
তাল পাতার পাখা আর
পাতার বাঁশি জুড়ায় প্রাণ,
বয়ন পাখির নীড়ে
সকাল সাঝে মধুর গান,
কেউ বা বলে বাবুই তাতে
সোনার সুই রাখে লুকোয়
খুললে নাকি পাওয়া যাবে
রাজকুমারীর দুল।
আগাম দিনের ঝড়ের দিকে
ঈশার ঐ নীড়ের মুখে।
বয়নে আঁশ, পাতার কারু
মাদুর টুকরী মিহি ঝাডু
তালের ডিঙ্গি তালের দোন
লাঙ্গলের ইশ্ ঘরের আড়
উই ঘুনে মানে হার।
তালের গুড়ি পুকুর ঘাটে
তালের গুড়ি মাছের আবাস
দিঘী আর জলাশয়ে।
তাল কাঠেরই শলার কোচ
মাছ শিকারী ছুড়ে।
তালের গুড়ি, তালের রস
আষাঢ়ে তালের শাস
ভাদ্দরে পাকা তালের ধুম,
আর তাল পিঠার ধুম
আহারে বিহারে শয়নে সপনে
আজও শুন্তে পাই।
৬ই মে, ২০০৪, উত্তরখান, ঢাকা।
সাথী জীবন
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
মনে পড়ে সেই ঢেপের মুড়ি
পানিফল আর তিলের খাজা
দাগ নাশিতে তিলের তেল
সকলের রাজা।
রসুন আর সরষে তেলে ভাজা
বৈশাখের পাট শাক আর
নতুন শুকনো মরিচের ঘ্রাণ
কিংবা সেই পাট-মেশতা পাতার ঝোল
কৈ আর শিং মাছ দিয়ে
শ্রাবনে, ভাদরে কিবা আশ্বিনে
ফিরে পেত হৃতবল জ্বরাগ্রস্থ
শ্রম-ক্লান্ত মানবে।
ভিটা বাড়ীর ক্ষেতে আউশ-কনকতারার পাশে
তিলের ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন,
কী যে ভালবাসা অপূর্ব মিলন
মধু আহরণ, পরাগায়ন আর বালাই দমন।।
ভুলে গেছি আজ
সহবান্ধব তিল আর ধান
আলু, মুলা, বাথুয়া
রাই-সরিষার সহ-অবস্থান।
কলা, লেবু, নারকেল
সাজনা, মান্দার, লঙ্কা-ঝাল
কেউ করেনা কারো ক্ষতি,
এক সাথেই বেড়ে খুশী।
অকেজো আগাছা বলে
বিনাশ করেছি শত জাতের উদ্ভিদ,
শত্রæ বলে করেছি সাবাড়
জানা অজানা মক্ষিকাকুল
পুকুরপারের ধারের মহানীম
রান্নাঘরের পাশে আঙিনায়
তুলসী, কালোমেঘ
গোছল খানার নালার ধারের নারকেল
কিবা আধো ছায়া জুড়ে
ওল, মান, দুধ-কৃষ্ণ কচু
আর মাটিতে জড়ানো থানকুনি লতা
বিষজারক আর বাসকে চৌদি ঘেরা।
ঠান্ডাজ্বড়ে তুলসী কালোমেঘ
হাফানী-কাশিতে বাসক জৈষ্ঠমধু
আর ফুড়াতে পুরনো ঘি
পুদিনা, রসুন আর জৈন বদহজমিতে
ওল আর ঘোল নিত অর্শ্ব নাশিতে
আমাশয়ে থানকুনি, লালপদ্ম
আর বেলশুট।
বার মাসের বার ফল
মধু, কাঁচালঙ্কা সর্বজ্বরা হরিতে
আনরসের কচিপাতা, কাঁচাহলুদ
আর কলিচুনের পানি প্রাতঃরাশের আগে
মাসেক অন্তরে; কৃমি নাশিতে নাই যার জুড়ি
অবশে বিষাদে বাতে ভেন্না, রসুনে
গরম সরিষার তেলে মালিশ,
খুষখুশি কাশিতে আদা আর লবন জলে গড়গড়া
নিমিষে সারিত ব্যাথা, কাশি ঝরঝরা
নিম, নিসিন্দা, মটখিলা, আপাং দন্তরোগে
সাজনা, আকন্দ, হেলেঞ্চা চর্মরোগে
আপাং, ঘৃতকুমারী, খারজুরা জুলাব
আখের রস কৃ”ছমুত্রে
আমলকি, হরিতকি, বহেরা, অর্জুন
টনিক সালসা আর হৃদরোগে সর্বগুন।
সকলই লাগিত কাজে নিরাময়ে রোগ
আঘাতে, শুচিতে, করিতে সম্ভোগ।
ফিরে পাব কি তাদের
এই এন্টিবায়োটিক-রসায়ন
আর রেডিওলজির যুগে?
নিশ্চিত আসব ঘুরে
যখন কঙ্কাল-সার হবে মোর দেহখানি
পাশক্রিয়ায় ভুগে।
৩১শে জানুয়ারী, ২০০৪, শ্রীমঙ্গল।
মানবতা
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
মনে আছে যার হুস্ সেইতো মানুষ
জ্ঞান-বিবেকে সিদ্ধ, আলাদা করতে পারে
ভাল আর মন্দ
কিবা উপকার আর অপকার;
সবই মানবের তরে সৃষ্ট
মানুষই রূপকার,
জ্ঞান আর বিজ্ঞান আহরণে, উৎসরিতে
ব্যবহারে, কল্যাণে মানবতার।
তবুও অসহায় আজ ধর্ম আর বিজ্ঞান
কাঁদে পড়শী অভাবের তরে
এক বেলার অন্ন নেই যার ঘরে
কষ্টে শুধু করছে বিলাপ
কঙ্কালসার দেহখানি নিয়ে
দুখী পুরবাসী কমিছে আয়ু বিশ কি তিরিশে
হায়রে অলুক্ষণে শিক্ষা!
টাকা বিনে যারে যায় নাকো ধরা,
কোচিং, গৃহশিক্ষার মাহিনা বেতন
গাইড আর নকল বইয়ের মূল্য।
পড়াশুনা শুধু মহা বিনিয়োগ
উঁচু আয়ের মহাব্যবসা;
সবার তরে শিক্ষা নয়কি দুরাশা?
বসে ভাবি শুধু শংকর এর ‘এইতো সেদিন’ এ
চীন-চর্চায় চীনা সাধকের বাণী
অন্যকে জানে যিনি পন্ডিত তিনি
নিজেকে জানলেই তবে হয় জ্ঞানী,
সন্তোষ আছে যার তিনিইতো ধনী
সংকল্পে দৃঢ় যিনি বলীয়ান তিনি,
মহা সংকটে ধৈর্যশীল অটুট তিনি।
পুচে নানা মানুষের মত আর অপরকে
জানায় সম্মান,
যাহা পায় তাতে তুষ্ট, সন্তুষ্টিতে চির সন্তুষ্ট
মৃত্যুর পরে স্মরি যারে তিনিই দীর্ঘজীবি,
বিত্ত বাসনাই এ বিশ্বময়ে মহাপাপ
মোহ-সোম্ভোগ আর অসন্তোষ চির অভিশাপ।
১৯শে মে, ২০০৪, উত্তরখান, ঢাকা।
চাই বিদেশী
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
মাদুর, টুক্রী, শীতলপাটি
বুনতে ফালুর মায়
কত কারূ ছিল তাতে
বয়ন তুলে লিখ্তো আরও
‘ভুলনা আমায়’।
আরও কত ছন্দ লিখ্ত
আমার মায়ের বর্ণমালায়
মুখোমুখি চকাচকি
বস্ত ডালে
বয়নেই প্রণয় আস্ত নেমে।
হারিয়ে গেছে আজকে তারা
মেলামাইন-প্লাষ্টিক আর
পলিথিনের মেলায়।
পায় না দাম ফালুর মায়ে
বৃথাই শ্রম তার।
বাঁশ বেতের পয়সা নেই তার
সংসার চলেনা আর।
দেশী ফল আম কাঁঠাল
ঢেফল বড়ই কামরাঙ্গা তাল
কাউ চালতা কদলি ডুমুর
হারালো আজ সবার কদর।
চাই যে শুধু বিদেশী ফলÑ
আপেল, আঙুর, নাশপাতি, আনার,
আলু বোখরা আর মালটা।
চাইনা কোন দেশী ফলÑ
গাব, মাখ্না, ডুমুর, বেল আর কদবেল।
চাই সব বিদেশী
আসবে চড়ে জাহাজে
বিমান কিবা কার্গোতে।
বিদেশী মুদ্রার নেই যে হিসাব
চলবে সবই হুন্ডিতে।
ইন্ভয়েস আর আন্ডার ইন্ভয়েস
এলসি শুল্কে ফাঁকিতে।
পেষ্টিসাইড আর ড্রাগের হিসাব
কোথায় গেল কোয়ারেন্টাইন?
রোগ-বালাইয়ে ভরল দেশ
মাননিয়ন্ত্রণের নাইকো মান।
আছে সবই নামে-মাত্র
হুযুগে আর মদদে তুষ্ট
আইন-শৃক্সখলা গোল্লায় গেলো
গড্ফাদারের ছায়াতে।
এমনভাবে চুষ্ছে রক্ত
লক্ষ দুই পরিবারে
আয়ের তাদের নেই যে হিসাব
সপ্তায় সপ্তায় যায়
বোম্বে, দুবাই, সিঙ্গাপুরে।
তাইতো চাই আঙুর আপেল
চাইনা বেল আর কদ্বেল।
৩১শে জানুয়ারী, ২০০৪, শ্রীমঙ্গল।
উন্নয়নের জোয়ারে
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
উন্নয়নের জোয়ারে
মরল চাষী আহারে!
ঘাম ঝরায়ে ফলায় ফসল;
শ্রম-ঘামের নাইরে দাম
মূল্য নেই তার ফসলের।
হালের বলদ বেচ্ল চাষায়
বীজ, সার, অষুধ কেনার তাগিদে,
নিজের ক্ষেতে হয়না বীজ
হাইব্রীড বীজের বরকতে।
গরু নাইতো গোবর কোথায়?
সার ছাড়া হয়না ফসল?
অষুধ বিনে সারে না বালাই,
টাকা ফুরায় কিন্তে তাদের
সেচ-মাড়াইয়ে বিদ্যুত বিলে।
যাইবা ফলায় আমার ভায়ে
বাজারজাতে মহাভার,
যানবাহনের ভাড়ার টাকা
আর চাঁদা শোধেই,
পকেট খালি হয় যে তার,
ঘরে ফিরে শূন্য হাতে।
মাথায় হাত চাপ্টে তার,
পিত্তশূল লেগেই আছে
আধা পেটেই আহার সার।
ভাব্ছে চাষা ভাব্ছে শুধুÑ
এরই নাম কি উন্নতি?
প্রশাসনের দুর্নীতি আর জ্বরাগ্রস্ত রাজনীতি
উঁচুনিচু ফারাক করে
লুট্ছে শতেক ধনপতি
কৃষক-চাষা পিষ্য হয়ে
ধূলায় যা”েছ গড়াগড়ি।
উন্নয়ন যে নগরায়ন,
বিমান বন্দর আর বঙ্গঁভবন,
আকাশ ছুঁয়া ফ্ল্যাটভবন,
নন্দন আর ফ্যান্টাসীতে আনন্দ ভ্রমণ।
গ্রামে গঞ্জে কর জংগল,
পাহাড় রয় ন্যাংটা পড়ে,
রাস্তার ধারে বনায়ন
বাড়ির ভিটায় বনায়ন।
গবেষণার নেইকো শেষ
আবিষ্কার আর পাবলিকেশন
পেঁয়াজ আনারস পঁচে গোবর
শহরের বর্জে হাকালুকির হাওরে বিষ
এরই নাম উন্নতি Ñ
নয়কি তা অসংগতি?
অনেক বাণী শুনেছে চাষা
বিনা পয়সার শিক্ষা
বিনা মূল্যে বই বিতরণ
আসে কি তা বছরে?
এনজিও ভাইরা খুল্ছে ইস্কুল
পড়বে সেথায় সকলে।
শুন্ছিলাম ওরা সেবা সংঘ
এখন দেখি টাকার অংগন
উঁচু আয়ের ব্যবসা যে।
ভার্সিটি নাকি খুলেছে আজ
ডজনে ডজন শহরে
টাকার অংক শুনলে তবে
কাৎরে চাষা বিকারে।
চাষার ছেলে পড়াশুনা
মরল আজ কল্পনা
আর আশ্বাসে।
সেই উন্নয়নে জোয়ারে
রাজপথের দুধারে
উল্টেপাল্টে গড়লে বারবার
আইল্যান্ড আর গোলচত্তর
উষ্ণ ভেজা ছায়ার তরু
রং বেরঙ এর কত কি?
চাউ-সুপারী সংসদ চত্বরের
খোলা সূর্যের খরতাপে
বাচ্বে কিনা র্মবে সেথায়,
প্রাণের মায়ায় গাছরে আমার
কোন মালী করবে চর্যা
কে জানে তার আবাস ভুম?
কত টাকা লাগ্বে তাতে
করতে পরিবেশ জীবন্ত?
তাইতো আমার চাষায় কাঁদে
গুলশানের ঐ ঝিলের পাশে
কেমন করে ভাস্ছে সেথা
বহুতল অট্টালিকা?
যানজট দেখে ভয় পেয়েছে
নাক ছিট্কে ডাষ্টবিনে
খ্যাৎ খ্যাৎ করে কাশে চাষা
পোড়া পেট্রোল-সীসার গন্ধে,
গাড়ীর হরনে বধির হলো
পরান কাঁপে ছিন্তাই এ
ছেলেকে ভর্তি করবে কোথা
পরলো চাষা দ্ব›েদ্ব।
অনেক ভেবে দেখলে চাষা
উন্নয়নের তুল্যমান,
ভিক্ষা চাওয়ার দীক্ষা শুধু
পরশীর কষ্টে নেই বেদন।
গরীব দুখী ভুখা ফাকার
শিক্ষা নেই এ শহরেÑ
ওরা শুধু গতর খাট্বে
বিত্তবানদের আন্ডারে।
তাইতো চাষা অবশেষেÑ
বললে দুখে ছেলেকে
‘শুনেছি অনেক ফাঁকা বুলি
বিনামূল্যের বাণী যে
শিক্ষা শুধু তাদের জন্য
টাকায় কেনা সনদ যে।
ডোনেশনের নেইযে টাকা
কেমনে পড়বি এ শহরে?
এমন শিক্ষা লাগবে না আর
চল্ বেটা যাই ঘরে ফিরে’।।
১২ই নভেম্বর, ২০০৪, শ্রীমঙ্গল।
বাংলা মা
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
বসুমতি ধন্যা বাংলা আমার মা
চির সুন্দরী রতœগর্ভা পবিত্র পূণ্যভূমি।
ফুলে ফলে ভরা শস্য শ্যামলা
যার অঙ্গনে অনন্ত যৌবনা গঙ্গাঁ যমুনা
খুঁজে পেল পরম পতি ব্রহ্মপুত্র
হাজার বছর ধরে খুঁজছে যারে।
কী আনন্দে সংগমে মিলনে ছুটেছে
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত, হেমন্তে মাতৃচরন সিক্ত পূণ্যজলে।
কখনও মাতাল উত্তাল তরঙ্গ,
কখন শান্ত বয়ে গেছে কলতানে,
যত জরা-জীর্ণ, যত পাপ-গ্লানি, দুঃখ-বিষাদ
করেছে বিসর্জন অথৈ সায়রে।
পথে পথে সুরমা, মেঘনা, তিস্তা, মহানন্দা, কংশ করেছে আলিঙ্গন
আর শত কোটি গ্রাম
নিত্য ¯œানে পূর্ণতা লভে মাতৃক্রোড়ে
যেন নিষ্পাপ শিশু নবজন্মে।
এইযে আমার মা,
হিমালয়, লুসাই আনত শিরে মহাকাল ধরে
অর্ঘজলে করলে তোমায় অনিন্দ সুন্দরী বিশ্বময়ে
পুণ্য, আলিঙ্গন, বিসর্জন
¯েœহ মমতা আর মায়ার বন্ধনে।
তোমার শাপলা, পদ্ম, কচুরীপানার হাসি
চম্পা, বকুল, কেয়া, কামিনীর ঘ্রাণ
আঝোর বর্ষার রিমঝিম শব্দ
শরতের শিশির ভেজা দুর্বাদল,
হেমন্তের পাকা ধানের মোহময় গন্ধ,
শীতের মাঠভরা সর্ষে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন
বসন্তের নব পল্পব আর কোকিলের কুহুতান,
গ্রীষ্মের কালবৈশাখীর উদাস নাচন
জানিনা আমি খোজে পাব কিনা অন্য কোথাও।
বাসমতী, কাঠারীভোগ, চিনিগুড়া, বিরুই, কনকতারার ঘ্রাণ
সোনালী আঁশ, রূপালী ইলিশ, খাসিয়া আর
মহেশ খালীর পান।
মেহেদী হলুদ গায়ে বর কনে
হাতে কঙ্কন সিঁথিতে সিঁদুর রূপে লাবন্য লজ্জাতুরা বধু।
মেঠো পথে রাখালের বাঁশীর সুর
কার না কাড়ে মন।
ভাই-বোন আর পরশীর আদর
আপদে বিপদে কিংবা গৃহস্থলী কাজে
ছুটে আসে সবে ঐক্যতানে জ্বরা ঝঞ্জাল কেটে
মূহুর্তে উঠে সেড়ে।
হাটে ঘাটে মাঠে পথে আর যানে
হৃদয়ে হৃদয়, কুশল বিনিময়
চেনা অচেনা পথচারী আর কুটুম¦ ¯^জনে,
বুকে বুকে কোলাকলি হাতে হাত মিলি
সালাম, আদাব, প্রনামে
সব ভেদাভেদ রাগরোষ মূহুর্তে যাই ভুলি।
এতযে মিলন ঈদ মহোৎসবে
বৈশাখী আর পৌষের মেলায়,
কত আয়োজনে বিয়ে-শাদী বৌভাতে
জন্মদিন, শেষকৃত্যে কিংবা চল্লিশায়,
পাবো কি আরও কোথায়
আমার মাতৃভূমি ছেড়ে?
মা, গরব আমার!
তোমারই কোলে লালিত হয়ে,
জন্মিছে যেখায় কালজয়ী বীর কালাপাহাড়
তীতুমীর সূর্যসেন আর ক্ষুাদরাম
দিয়েছে জীবন, মানেনি হার।
আজো নজরুলের সেই কণ্ঠ-
“এদেশ ছাড়বি কিনা বল
নইলে কিলের চোটে হাড় করিব জল”
আর ফৌজ ঘেরা রেসকোর্সে
বজ্র কণ্ঠে¯^াধীনতার আহবান।
জন্মেছে তোমার কোলে
শ্রীকৃষ্ণ, চৈতন্য, অতীশ দীপংকর
রবীন্দ্র, সুকান্ত, শহীদুল্লাহ, শংকর
জয়নুল, শরত আর আর্মত্যসেন।
তোমার সন্তান টমি মিয়ার
মোহনী রাজভোগ খাবারে তুষ্ট
বৃটেনের রাণী আর বিলাসী সুলতান।
যুগে যুগে এসেছে সাধক তোমারই প্রেমে
বায়োজিদ, শাহ্জালাল, শাহ্ মখদুম
শেখ ফরিদ তোমাতেই হয়েছে ধন্য।
এসেছে লোভী, ফিরিংগী, মারাঠা
তুর্কী, আরব আর ইংরেজ তোমার
রতনের খোঁজে, যুগে যুগে।
লুটেছে হীরা জহরত, মানিক, রতন
আর জামদানী, মসলিন।
কেউবা এসে বেসেছে ভাল তোমার মহিমায়,
তোঘলক, পাঠান আর মোঘল
পুত্রবৎ সেবিছে তোমায়,
ফুটিয়েছে ফুল তোমারই কাননে
ব্রæস, রক্সবার্জি আর সালার খান
তোমার তরুলতার ভান্ডারে সাজায়ে সাজায়ে।
এসেছে হিউয়েন সাং আর ইবনে বতুতা তোমার রূপ লাবন্য।
আজও আসে লক্ষ কোটি অতিথি পাখি জলকেলিতে
মেরু বৃত্ত সুদূর সাইবেরিয়া থেকে,
শুধু তোমারই মোহে, পরশে তোমার আসীম ভান্ডার।
এসো ভাই বোন সকলে মিলি
তুলে ধরি আমার মায়ের কৃষ্টি
¯^ল্পে তুষ্ট, জ্ঞানে অদম্য।
সুখ দুখে মোরা সবাই সাথী,
সবারই কণ্ঠে একই ধ্বনি
মা, মানবতা প্রিয় মাতৃভূমি।
এসো ভাই উ”চ কণ্ঠে করি আহবান-
এসো মাও, চিয়াং কাইসেক, লেলিন
ষ্ট্যালিন আর সান্জেৎসা
এসো চার্চিল, নেহেরু, মেন্ডেলা
সোকর্নো, ওয়াশিংটন
এসো নাসের, এসো নেপোলিয়ান
এসো মোর দেশে, যেথায়
শ্বেত কৃষ্ণ, আর্য অনার্য, পীত মঙ্গোলীয়
হিন্দু, মুসলীম জৈন আর বৌদ্ধ খৃষ্ঠান
সকলে ভাই ভাই, কোন ভেদ নাই।
শশ্রæ, টুপি, পাগড়ি, চুড়ি
টিকি, পৈতে, টিপ, সিঁথিতে সিঁদুর
গহনা, উড়না, উলু, শক্সখ ঘন্টা
আর মসজিদের সে সুরেলা আজান;
কিছুতেই নেই বাঁধা।
৮ই মে, ২০০৪, উত্তরখান, ঢাকা।
কবুতরের জামাই খানা
-মোহাম্মদ আতাউর রহমান
আসলো জামাই শ্বশুর বাড়ি
সারা বাড়ি হুড়াহুড়ি
খুঁজছে শ্বাশুড়ী কবুতরছানা,
কবুতর বিনে হয় না খানা-
খাসী, গরু, মুরগী দিয়ে
হবে না তো জামাই খানা।
কী আছে সেই কবুতরে?
শ্বাশুরী তা ভাল জানে
উড়তে নাকি পারে তা
দিল্লী কিংবা অনেক দূরে,
কী যে সে ভীষণ গতি
ঘন্টায় যায় ষাটের বেশী,
কোথা হতে পেল শক্তি
খায়তো শুধু রতি রতি!
কলাই, মুগ, চীনা-কাউন
শস্য দানা আর পাথর-কণা।
তিন ভাল যার আঠার মানা
পুষতে গিয়ে বিড়ম্বনা।
রাক্ষুসে তার ¯^ভাব খানা
দেশ-বিদেশ ঘুরে ফিরে
বিষ্ঠা ফেলে যথা তথা।
ডাক যে তার মহাপ্রিয়
মাসের শেষে দুটোছানা
পাখার বায়ে বালাই সারে
তীক্ষè তার স্মরণ শক্তি
বিলায়ে আসে রাজ-পত্র
আরো যত প্রেমের পত্র
মনিবেরই মহাভক্ত।
বেঁচা কেনায় মহা দায়
বেচতে হয় তা অন্ধ খাঁচায়।
শান্তির প্রতিক আজও তাহা
ভাবলে সত্যি অবাক লাগে,
রণ ক্ষেত্রের যোগাযোগে
শত্রæকে দেয় সন্ধি পত্র।
ছোট কিন্তু নয়রে ছোট
বড় ভাইয়ের দাদা
কবিমন তাই তো ভাবে
ব্রয়লার দিয়ে তা কী হবে-
উড়া তো তার দূরের কথা
দাঁড়াতে গেলেই মুচড়ে পড়ে
তাই তো বলি
ভেবে চিন্তে কর কাজ,
ডেকো না আর সর্বনাশ।
বেশী কিন্তু নয়-রে বেশী,
খাবার কিন্তু খাবে দেশী
গোলক ধাঁধায় পড়ো না আর
ভুলনা নিজ দেশের আচার।
২রা জানুয়ারি ২০১৫, উওরা, ঢাকা
Latest posts by Dr. Mohammed Ataur Rahman (see all)
- Ecosystem Management is the Key to Reduce Climate Impacts and Food Security - December 23, 2020
- Ecosystem Management is the Key to Reduce Climate Impacts and Food Security - December 23, 2020
- Climatic Adaptation and Sustainability of Rice in Bangladesh - September 5, 2020